আদার উপকারিতা – প্রাচীন কাল থেকেই আদা আমাদের জাতীয় সংস্কৃতির সাথে মিশে আছে। এমন কোনো ঘর হয়ত খুজেও পাওয়া মুশকিল যে ঘরে রান্নায় আদা ব্যবহার করা হয়না। বহু বছর থেকেই আদা এর প্রয়োজন শুধুই কি রান্নায় সীমাবদ্ধ? আদা শুধুই রান্নার স্বাধ বৃদ্ধি করে না বরং আমাদের নিত্যদিনের স্বাস্থ্য সুস্থ রাখতে নানা উপায়ে আমাদের সহায়তা করে।
আদা এর ঔষধি গুনাগুন অনেক। যারা আদার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানতে চান আজকের আর্টিকেল টি তাদের জন্য। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা নিয়মিত আদা খাওয়ার অভ্যাস আছে কিন্তু এর উপকারিতা গুলো সম্পর্কে তেমন কোনো জ্ঞান রাখেন না। আজকের আর্টিকেল টি তে জানাবো আদার উপকারিতা অপকারিতা সহ সব কিছু।
আদা কি?
আদার উপকারিতা অপকারিতা জানার পূর্বে আমাদের আদার পরিচয় ভালো ভাবে জানা প্রয়োজন। আদা সাধারণত একটি মূল হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এই মূল কে প্রাচীন গ্রীস ও রোমের মানুষরা সর্বপ্রথম এর ভেষজ ও রান্নার মশলা হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করে।
এশিয়া মহাদেশে সবচেয়ে প্রথম বেশি যে মশলা পাওয়া যায় তা হলো আদা। এশিয়া মহাদেশে প্রথম দিকে আদার এত পরিকান বিপনন হতো যে, ইউরোপে বানিজ্যিক রপ্তানি শুরু করে প্রথম কোনো রান্নার মশলা হিসেবে। আদা দিয়ে সাধারণত বিভিন্ন ধরণের রান্নার সুগন্ধি বাড়ানো ও স্বাদ বৃদ্ধিতে ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে, আচার, পানীয়, ঔষধে এর ব্যবহার অত্যাধিক পরিমানে।
আদার উপকারিতা
আদার অনেক গুনাগুন রয়েছে। নিয়মিত আদা খাওয়ার যত উপকারিতা আছে তা নিচে বিস্তারিত দেয়া হলো-
১- মাইগ্রেনের ব্যাথা কমায়
আদার অন্যতম বৈশিষ্টের মধ্যে একটি হলো এটা ব্যাথা কমাতে অনেক সহায়ক। মাইগ্রেনের ব্যাথা কমাতে আদা সহায়তা করে। আদা নিয়ে গবেষক রা একটি জার্নালে প্রকাশ করেন যে, আদার রশ মাইগ্রেনের ব্যাথা উপশম করতে অনেক টা কার্যকরী ভুমিকা পালন করে। তাই বলা যায় আমাদের মধ্যে যারা মাইগ্রেনের সমস্যা ভুগছেন নিয়মিত আদা খেতে পারেন।
আরো পড়ুন- সকল রোগের ঔষধ কালোজিরার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন
২- হার্ট সুস্থ রাখে
আমাদের শরিরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি অংগ হলো হার্ট। হার্টের সুস্থতা নিশ্চিত করা আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আদার ঔষধি গুনাগুম গুলো হার্ট সুস্থ রাখে। রক্ত জমাট বাধা, প্রদাহ ইত্যাদি সমস্যা গুলো কে আদা সহজেই নিয়ন্ত্রন করতে পারে। তাই বলা যায় নিয়মিত আদা খাওয়ার অভ্যাস আপনার হার্ট সুস্থ রাখতে পারে।
৩- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
বিভিন্ন গবেষণার ভিত্তিতে প্রমানিত হয় যে, আদা কোলেস্টরাল কমাতে সহায়ক। আদা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে। আদার রশে থাকা ঔষধি গুনাগুন রক্তচাপ ঠিক রাখতে ভুমিকা পালন করতে সক্ষম। নিয়মিত আদা খাওয়া রক্তচাপ কে নিয়ন্ত্রন করতে পারে।
৪- ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রন করে
আদার রসে অনেক ঔষধি গুনাগুন এর মধ্যে এটি একটি। আদা রক্তে থাকা শর্করার পরিমান নিয়ন্ত্রন করতে পারে। পাশাপাশি ইনসুলিনের সক্রিয়তা বৃদ্ধি করতে ব্যাপক ভুমিকা পালন করে। নিয়মিত আদার ব্যবহার ডায়বেটিস রোগিদের জন্য ভালো হতে পারে।
আরো পড়ুন- বিদেশ যাওয়ার জন্য কোন ব্যাংক লোন দেয়- কত টাকা লোন দেয়? 2023
৫- ওজন কমাতে সহায়তা করে
আমাদের মধ্যে যাদের ওজন অনেক বেশী তারা ওজন কমানোর জন্য কত কিছুই না অনুসরন করি। কিন্তু আপনি জানেন কি আদা ওজন কমাতে সহায়তা করে? আদার গুনের মধ্যে রয়েছে অতিরিক্ত চর্বি কমানোর ক্ষমতা। শরিরে অতিরিক্ত চর্বি কে নিয়ন্ত্রন করতে পারে। ওজন কমাতে অন্য অন্য সব জিনিসের ক্ষেত্রে আদা কেও ব্যবহার তালিকায় রাখতে পারেন।
আরো পড়ুন- মেয়েদের দ্রুত ওজন কমানোর উপায় – কার্যকরী মাধ্যমে ওজন কমিয়ে ফেলুন
৬- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
নিয়মিত আদা খাওয়ার উপকারিতায় এটা পাওয়া যায়। শরিরের রোগ প্রতিরোধী হিসেবে কাজ করে। আমাদের শরিরের ইম্যুইন সিস্টেম যত বেশী শক্তিশালী হবে আমাদের শরিরে রোগের উৎপত্তি কমতে থাকবে। নিত্যদিনের অন্যন্য খাবারের তালিকায় অল্প করে আদা রাখার চেষ্টা করতে পারবন।
৭- সর্দি, ঠান্ডা উপশম করে
ঠান্ডা কমাতে আদার ভুমিকা অনেক। বিশেষ করে, ঠান্ডার কারনে টন্সিলে ব্যাথা অনুভূতি পাওয়া সকলের কাছে এক বিরক্তির বিষয়। এ অবস্থায় সামান্য পরিমান আদা ও গরম পানি আপনার ব্যাথা অনেক কমিয়ে দিতে পারে। আপনি চা এর পাশাপাশি আদা ব্যবহার করতে পারেন।
আদার রসের উপকারিতা
আদার রশের অনেক গুলো উপকারিতা উপরে আলোচনা করলাম। তবে ছোট খাটো অনেক উপকারিতায় আদার রস অনেক ভুমিকা পালন করে –
- বসন্ত রোগে – বসন্ত রোগে আদার রস অত্যান্ত উপকারি ভেষজ হিসেবে কাজ করে। কখনো বসন্ত রোগের লক্ষন পেলে আদার রস ব্যবহার করতে পারেন।
- কাশি – অতিরিক্ত ঠান্ডার ফলে আমাদের কাশের সমস্যা হতে পারে। এ সমস্যায় কাশ কমাতে আদা সাহায্য করে।
- হাপানি– হাপানি রোগীদের জন্য আদার রস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ মূল হিসেবে কাজ করে।
- ব্যথা- শরিরের যে কোনো অংশের ব্যথা কমাতে আদার রস সহায়তা করে।
আদার ব্যবহার
আদার অনেক ব্যবহার পদ্ধতি রয়েছে। তার মধ্যে দুটি জনপ্রিয় ও উপকারি পদ্ধতি নিচে দিলাম-
আদার তেল রেসিপি
আদা দিয়ে সহজেই তেলের রেসিপি বানিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
উপকরনঃ– ১ কাপ পরিমান কুচি করে কেটে নেয়া আদা ও ২০০ মিলি জলপাইয়ের তেল।
কার্যপ্রাণালীঃ- একটি পাত্রে তেল ও আদা দিয়ে ভালো করে ভেজে নিন। ভাজা হয়ে গেলে তেল থেকে আদা ছেকে আলাদা করে রাখুন। যখন ঠান্ডা হয়ে যাবে তখন জলপাইয়ের তেলের সাথে বোতল বা অন্য কিছুতে সংরক্ষন করে দীর্ঘদিন ব্যবহার করতে পারেন।
আদার চা রেসিপি
আমাদের অনেকের চা খাওয়ার অভ্যাস আছে। চায়ের সাথে আদা মিলিয়ে খাওয়া অনেক উপকারি নিচে দেখে নিন কিভাবে বানাবেন-
উপকরন- পরিমান মত পানি, ১ চা চামচ আদা, পরিমান মত চিনি, এলাচ, চা পাতা, দুধ।
কার্যপ্রণালী- একটি পাত্রে পানি গরম করুন। কিছুটা গরম হয়ে আসলে আদা ও চিনি দিয়ে দিন। এর পরে এলাচ ও দুধ দিয়ে মিশিয়ে নিন। পানি ফুটে গেলে চা পাতা দিয়ে ফিল্টার করে চায়ের কাপে ঢেলে নিন।
আদা গরম পানির উপকারিতা
আদা গরম পানির অনেক উপকারিতা আছে। এক গ্লাস গরম পানির মধ্যে এক টুকরো আদা শরিরের জন্য অত্যন্ত উপকারি। শরিরের কোনো অংশের ব্যাথা কমাতে চাইলে গরম পানির মধ্যে আদা রেখে খেতে পারেন। এতে ব্যাথা উপশম হয়ে যায়। যারা ব্যাথার ঔষধ ব্যবহার করতে চান না এটা তাদের জন্য অনেক উপকারি।
আরো পড়ুন- ডিজিটাল মার্কেটিং কি – ডিজিটাল মার্কেটিং কিভাবে করে বিস্তারিত
আদার ক্ষতিকর দিক
যেখানে উপকার আছে সেখানে অতিরিক্ত ব্যবহারে অপকারিতা থাকাটাও একটা স্বাভাবিক বিষয়। আদার উপকারিতা যেমজ অনেক তার অপরিকাতাও অনেক হয়ে যাবে যদি আপনি অতিরিক্ত পরিমান ব্যবহার শুরু করেন। আদা রক্তে শর্করার পরিমান কমায়। অতিরিক্ত সেবনে যাদের ডায়বেটিস আছে অতিরিক্ত শর্করা কমিয়ে দিলে সেটা অবশ্যই ক্ষতির কারন হয়ে দাঁড়ায়।
যাদের রক্তচাপ অনেক কম তারা অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকতে পারেন। আদা রক্তচাপ কমায়। এ ছাড়াও শারিরীক বিভিন্ন অসুবিধার কারনে আদার ব্যবহার আপনার জন্য উচিৎ নাও হতে পারে। তাই সর্বদা একজন ডাক্তার এর পরামর্শ নেয়া টা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
আমাদের শেষ কথা
আদার উপকারিতা অপকারিতা আর্টিকেলে আমরা আদার গুনাগুন সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। কোনো স্থানে কোনো ভুল তথ্য থাকলে অবশ্যই আমাদের জানাতে পারেন। আমাদের সাথে যুক্ত হতে পারেন গুগল নিউজে।
আরো পড়ুন- ১ লাখ টাকায় ব্যবসা – যে 6 টি ব্যবসা করলে বেশী লাভবান হবেন