তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়মঃ তাহাজ্জুদ নামাজ হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটা রাতের এক তৃতীয় অংশ বাকি থাকার সময় পড়া উত্তম। তবে এশার নামাজ আদায়ের পরে বিতরের নামাজের আগে ও তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা যায়। কিন্তু যারা ঘুম থেকে উঠতে পারেন না তারা রাতের এক তৃতীয় অংশে পড়বেন। অর্থাৎ, শেষ রাতের দিকে পর উত্তম। নবী করিম (সঃ) বলেছেন, যারা বিনা হিসেবে জান্নাতে যাবেন তাদের মধ্যে এক দল থাকবেন তাহাজ্জুদ আদায় কারি, সুবহানাল্লাহ। নবী করিম (সঃ) তার জিবনে কোনো দিন তাহাজ্জুদ নামাজ ছাড়েন নি।

আমরা যারা মুসলিম তাদের অবশ্যই তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম মেনে আদায় করা উচিত। যদি গভির রাতে আদায় না করতে পারি তাহলে এশার নামাজের ফরজ নামাজ পরে দুই রাকাত সুন্নাত পরে বেতেরের নামাজের আগে দুই রাকাত তাহাজ্জুদের নামাজের নিয়ত করে আদায় করে বিতেরের নামাজ আদায় করে ঘুমাবো। তাহলে আল্লাহ আমাদের তাহাজ্জুদের নেকী দান করবেন।

আজকে আমরা তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা করবো। তাহাজ্জুদ নামাজ কি? এর নিয়ত কি? তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত কি? তাহাজ্জুদ নামাজের পুরুষ্কার কি? কেন তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা উচিত এ সম্পর্কে আজকে আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ।

তাহাজ্জুদ নামাজ কী

তাহাজ্জুদ শব্দের অর্থ “রাত জাগা“। গভির রাতে যে নফল ইবাদত আদায় করা হয় তাকে তাহাজ্জুদ নামাজ বলে। তাহাজ্জুদ নামাজ হলো একটি নফল ইবাদত। সকল নফল ইবাদতের মধ্যে তাহাজ্জুদ নামাজ হলো অন্যতম ইবাদত। নবী করিম (সঃ) বলেন, যারা রাতে জেগে নামাজ আদায় করতে কষ্ট হয় তারা যেন কম পক্ষে এশার নামাজ আদায় করে বেতেরের নামাজের আগে দুই রাকাত নামাজ তাহাজ্জুদের নিয়তে আদায় করে। আর যারা রাতে জেগে নামাজ পড়বে সেটা হবে সর্ব উত্তম।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত

আরবী অনুবাদ-” نَوَيْتُ اَنْ اُصَلِّىَ رَكَعَتِى التَّهَجُّدِ – اَللهُ اَكْبَر”

বাংলা উচ্চারণ– “নাওয়াইতুয়ান উসাল্লিয়া ল্লিহাহি তায়ালা রাকাতাই সলাতিল তাহাজ্জুত মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবর।”

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম হলো, সর্ব উত্তম নিয়ম হলো দুই দুই রাকাত করে বারো রাকাত নামাজ আদায় করা। তবে চাইলে এর চেয়ে বেশি আদায় করতে পারবে। নবী করিম (সঃ) দুই, দুই রাকাত করে সর্ব মোট বারো রাকাত নামাজ আদায় করতেন তার পরে বেতের নামাজ আদায় করতেন। নবী করিম (সঃ) রাতের শেষ অংশে এই নামাজ আদায় করতেন। তাই আমাদের উচিত রাতের শেষ অংশে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা। আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন আমাদের কে তাহাজ্জুদ নামাজ পরার মতো তাওফিক দান করুন আমিন।

  • জায়নামাযে দাঁড়িয়ে তাকবিরে তাহরিমা পড়ে তাহাজ্জুদ
  • নামাজের নিয়ত পড়া
  • ছানা পড়া
  • সূরাহ ফাতিহা পড়া ও অন্য সূরাহ মিলানো অন্যান্য নামাজের মত ২ রাকাত নামাজ আদায় করা।

তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত

নবী করিম (সঃ) মেরাজে যাওয়ার আগে তার উপর শুধু তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করার হুকুম ছিল। আর যখন মেরাজ থেকে ফিরে আসেন তখন আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন আমাদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করে পাঠিয়েছে। আর তাহাজ্জুদ নামাজ কে করেছেন নফল ইবাদত। পবিত্র কুরআন শরীফে তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব সম্পর্কে অনেক আয়াত নাজিল হয়েছে। শেষ রাতে যখন রাতের এক তৃতীয় অংশ বাকি থাকে তখন আল্লাহ প্রথম আসমানে নেমে আসেন আর বান্দাদের কে বলেন, হে আমার বন্দারা, এখন আমার কাছে তোমরা চাও তোমরা যা চাবে আমি আল্লাহ তাই তোমাদের কে দিবো। তোমরা আমার কাছে ক্ষমা চাও, আমি ক্ষমা করে দিবো।

আরো পড়ুনঃ জুমার নামাজের নিয়ত, নিয়ম ও ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত

তোমরা আমার কাছে  রিজিক চাও আমি রিজিকে বরকত দিয়ে দিবো আমরা আমার কাছে সম্পদ চাও, আমি তোমাদের কে সম্পদ দিয়ে দিবো। সুবহানাল্লাহ। আমরা তখন আল্লাহর কাছে যা চাবো তাই পাবো। তাই আমাদের উচিত বেশি বেশি তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা আর আল্লাহর কাছে আমাদের চাহিদা অনুযায়ী যার যা প্রয়োজন তা চাওয়া। ইনশাআল্লাহ আল্লাহ আমাদের কে সকলের দোয়াকে কবুল করবেন।

তাহাজ্জুদ নামাজের পুরষ্কার

নবী করিম (সঃ)বলেন, যে ব্যক্তি তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে আল্লাহ পাক তাকে বিনা হিসেবে জান্নাত দিবেন, সুবহানাল্লাহ। তার দুনিয়ায় কোন রিজিকে ঘাটতি রাখবেন না। তাকে সমাজে চলা ফেরায় অধিক সম্মান দান করবেন। তাই আমরা সবাই যেন তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে পারি সেই তাওফিক ও সেই মন মানুষিকতা আল্লাহ আমাদের সকল মুসলমানদের দান করুন আমিন। তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম মেনে আদায় করতে পারলে নিশ্চয়ই আল্লাহ আপনাকেও হতাস করবেন না।

তাহাজ্জুদ নামাজের দোয়া

তাহাজ্জুদ নামাজে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) নিম্নোক্ত দোয়াটি পাঠ করতেন। তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম এর মধ্যে দোয়াটি পাঠ করতে পারেন।

আরবী অনুবাদ– “رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هَذا بَاطِلاً سُبْحَانَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ – رَبَّنَا إِنَّكَ مَن تُدْخِلِ النَّارَ فَقَدْ أَخْزَيْتَهُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ-رَّبَّنَا إِنَّنَا سَمِعْنَا مُنَادِيًا يُنَادِي لِلإِيمَانِ أَنْ آمِنُواْ بِرَبِّكُمْ فَآمَنَّا رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الأبْرَارِ”

বাংলা উচ্চারণ- (রাব্বানা মা খালাক্বতা হাজা বাত্বিলান। সুবহানাকা ফাক্বিনা ‘আজাবান্নার’। রাব্বানা ইন্নাকা মাং তুদখিলিন্নারা ফাক্বাদ আখঝাইতাহু, ওয়া মা লিজজ্বালিমিনা মিন্ আংছার। রাব্বানা ইন্নানা সামি’না মুনাদিআই ইউনাদি লিল ইমানি আন আমিনু বিরাব্বিকুম ফাআমান্না. রাব্বানা ফাগফিরলানা জুনুবানা ওয়া কাফ্‌ফির আন্না সাইয়্যেআতিনা ওয়া তাওয়াফ্ফানা মাআ’ল আবরার।)

তাহাজ্জুদ নামাযের সময়

অনেকেই জানেন না তাহাজ্জুদ নামাজ আসলে কোন সময়ে পড়তে হয়। সাধারণত তাহাজ্জুদ নামাজ এর সময় শুরু হয় রাত ২ টার পর থেকে। একটি রাত কে তিনটি ভাগে ভাগ করে তার শেষ অংশে পড়া উত্তম। তবে অনেকের জেগে থাকাটা কষ্টদায়ক হতে পারে এজন্য চাইলে এশার নামাজ এর শেষে তাহাজ্জুদ এর নামাজ আদায় করা যাবে৷ তবে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন রাতের শেষ অংশে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার। তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম এর মধ্যে এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ।

আরো পড়ুনঃ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের ফজিলত ও সময়সূচী

তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত নাকি নফল

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে নিচের ভিডিও টি দেখে নিতে পারেন।

তাহাজ্জুদ নামাজ সম্পর্কে মিজানুর রহমান আজহারী এর ভিডিও টি আপনাদের বুঝতে অনেক বেশী সহায়তা করবে।

শেষ কথা

তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় কারিকে আল্লাহ বিনা হিসেবে জান্নাত দিবেন এর থেকে আর কোন বড়ো পুরস্কার মুসলমানদের জন্য আর কিছু হতে পারে না। নবী করিম (সঃ) বলেন, যে ব্যক্তি নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করবে সে যেন দুনিয়ায় তার জান্নাত কামাই করলো। ফরজ নামাজের পরে সুন্নাত ও নফল ইবাদতের মধ্যে তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব সব থেকে বেশি। তাই আমাদের গুরুত্ব সহ কারে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা উচিত। আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন আমাদের কে তাহাজ্জুদ নামাজনিয়মিত সঠিক ভাবে আদায় পড়ার তাওফিক দান করুন আমিন।

About admin

Check Also

জুমার নামাজের নিয়ত

জুমার নামাজের নিয়ত, নিয়ম ও ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত

আপনি যদি জুমার নামাজের নিয়ত না জানেন তাহলে আজকের পোস্টটি আপনার জন্য। জুমার নামাজ প্রতি …