পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার ইসলামিক উপায় – কীভাবে মনোযোগী হবেন?

পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার ইসলামিক উপায়ঃ
আমাদের যারা স্টুডেন্ট সম্প্রদায় আছে তাদের অনেক কমন যেই সমস্যাটা চোখে পরে সেটা হচ্ছে তারা বেশিরভাগই পড়াশোনায় অমনোযোগী থাকে। অনেকে দেখা যায় বইয়ের পড়া মনে রাখতে পারেন না। তাই যেখা যায় এসব নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের মনে ভীতির অভাব থাকে না। আজকে এই বিষয়গুলো নিয়েই আলোচনা করবো। পাশাপাশি পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার ইসলামিক উপায় সম্পর্কে জানাবো।

পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার ইসলামিক উপায়

আমরা অনেকেই পড়াশোনার আসল নিয়ম টা জানি না। বা এই বই পড়ার উদ্দেশ্যটা যে আসলে কি? সে বিষয়ে অনেকেই অবগত নন। বই পড়ার আসল মানে হচ্ছে জ্ঞান অর্জন। কিন্তু সেই বিষয়ে আমাদের আগ্রহ নেই

বই পড়ার মাধ্যমেও যে আমরা আনন্দ পেতে পারি এই কথা গুলো আমাদের কাছে আশ্চর্য জনক পড়তে বসলে আমাদের একটাই উদ্দেশ্য থাকে কিভাবে পরা মুখস্ত করবো।যার কারনে আমরা চেষ্টা করতে থাকি মুখস্থ করতে। তাড়াহুড়ো করে মুখস্থ করতে চাই। যেনো মুখস্থ করতে পারলেই আমরা জয়ী হয়ে যাবো। এর জন্যই পড়াশোনার ব্যাপারে আমরা মনোযোগী হতে পারি না। মহান আল্লাহ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ওহি আসার পর তা মুখস্ত করার বিষয়ে তাড়াহুড়ো করতে নিষেধ করেছেন। বরং ধীরস্থিরতা অবলম্বনের উপদেশ দিয়েছেন।]

ঈমান কত প্রকার ও কি কি এবং ইহার অর্থ কি? 

সুতরাং, মহান আল্লাহর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেয়া এ উপদেশ দ্বারা এটা প্রমানিত হয় যে আমাদের পড়াশোনার ব্যাপারে তাড়াহুড়ো করা যাবে না। একটা পড়া পড়তে গেলে বুঝে বুঝে ধীরে ধীরে আয়স্ত করতে হবে।

পড়ালেখায় মনোযোগী হওয়ার দোয়া

পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার ইসলামিক উপায় এর মধ্যে নিম্নে কিছু দোয়া দেওয়া হলো যেগুলো নিয়মিত পড়লে মানুষের মুখস্ত শক্তি বাড়াতে সাহায্য করবে ইন শা আল্লাহ। পড়াশোনায় মনোযোগ দৃঢ় করার জন্য এই দোয়াটি পড়তে পারেন-

দোয়া- আল্লাহুম্মা ছাব্বিতনী ওয়াজআলনী হাদিইয়্যাম মাহদিইয়্যা।
বাংলা অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি আমাকে দৃঢ় রাখুন, এবং পথ প্রদর্শক ও সুপথপ্রাপ্ত বানান। (সহীহ বুখারী-৩০, সহীহ মুসলিম-২০)

নিম্নোক্ত দোয়াটি নিয়মিত পড়লেও পড়াশোনা মনোযোগ বৃদ্ধি পাবে ইন শা আল্লাহ।

(اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَالْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ)

অর্থ: হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে।”

হযরত আনাস রাযি. হতে বর্ণিত, রাসূল ﷺ চিন্তাযুক্ত অবস্থায় উক্ত দোয়া টি পড়তেন। (বুখারী ২৮৯৩)

পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার ইসলামিক উপায়। অনেক সময় দেখা যায় পড়তে পড়তে মাথায় কাজ করছে না। খুব অসহ্য লাগছে। অস্থির লাগছে।
তখন বই পড়া থেকে উঠে অযু করে একটি কুরআন তিলাওয়াত করে নিবেন। এরপরে আবার পড়তে বসবেন। দেখবেন আপনার মন শান্ত হয়ে গেছে। আগের মতো অসস্থি কাজ করছে না। পড়তে ভালো লাগছে।
উচ্চারণ : ‘রাব্বি যিদনি ইলমা।
এই দোয়াটি নিয়মিত পড়লে মানুষের মুখস্ত শক্তি বাড়াতে সাহায্য করবে ইন শা আল্লাহ। এবং পড়াশোনায় মনোযোগ বৃদ্ধি করবে।পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার ইসলামিক উপায় এটি অনেক বেশী পরিচিত।

পরীক্ষায় সফল হওয়ার দোয়া

পরিক্ষায় ভালো করতে হলে প্রথমেই আগে থেকেই ভালো ভাবে পড়াশোনা করতে হবে। কারন ভালো ফলাফল করতে হলে পড়ালেখার কোনো বিকল্প নেই। পাশাপাশি দোয়া পাঠ করে আল্লাহর রহমত প্রার্থনা করতে হবে।

(اللَّهُمَّ حَاسِبْنِي حِسَابًا يَسِيرًا)

উচ্চারণ :- আল্লাহুম্মা হাসিবনি হিসাবাইঁ ইয়াসিরা।”
”অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি আমার পরীক্ষা সহজ করে দেন”। পড়াশোনা নিয়ে কখনওই অতিমাত্রায় দুশ্চিন্তা করবেন না।

অনেকেই পড়তে বসলে যতো ধরনের দুশ্চিন্তা আছে সব করা শুরু করে দেন। ভাবেন যে আমার তো কিছুই পড়া হয়নি। আমার অমুক বন্ধুরাতো বই শেষ করে ফেলেছে। আর আমি বইয়ের দু পাতাও শেষ করতে পারিনি।পরিক্ষার আর মাত্র কয়েকটি দিন বাকি আছে।আমি বুঝি ফেইল করবো। পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার ইসলামিক উপায়।
আমার বন্ধুরা অনেক ভালো রেজাল্ট করবে। ওরা তো হাসবে আমাকে দেখে। এমমন চিন্তা ভাবনা করা যাবে না।

জুমার নামাজের নিয়ত, নিয়ম ও ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত

একটা কথা মনে রাখবেন দুশ্চিন্তা আপনার শত্রু। আপনি যতই দুশ্চিন্তা করেন আপনার মন আরও অশান্ত হয়ে পড়বে। ভাববেন যে আর পড়ে কি হবে। আমি তো ফেইল ই করবো। আপনার আর পড়ায় মন বসবে না। তাই এইসব চিন্তা না করে ভাব্বেন যে আমি পারবো। আমার দ্বারা হবে। আমি পরিক্ষায় ভালো করবো। এগুলো ভেবে পড়তে বসবেন।
দেখবেন পড়ায় মন বসবে।

নিজে ঠিকভাবে পড়াশোনা করবেন পাশাপাশি আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে হবে। কেননা কুরআনে আছে-

وَ مَنۡ یَّتَوَکَّلۡ عَلَی اللّٰهِ فَهُوَ حَسۡبُهٗ ؕ اِنَّ اللّٰهَ بَالِغُ اَمۡرِهٖ”

আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তাঁর উদ্দেশ্য পূর্ণ
করবেনই”! [সুরা ত্বালাক : আয়াত ৩০]

পড়া মনে রাখার সূরা

নিম্নোক্ত সূরা গুলো বেশি বেশি পাঠ করলে আপনার স্বৃতিশক্তি বৃদ্ধি পাবে ইন শা আল্লাহ।

১/ সূরা হাশর।
২/ সূরা ফাতিহা।
৩/ সূরা ইখলাস।

পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার সহজ উপায় গুলো জেনে নিন

পড়া মনে রাখার গোপন কৌশল

এখন আপনাদের জন্য নিয়ে আসলাম পড়া মনে রাখার কিছু গোপন কৌশল

১-বিরতি দিয়ে বার বার পড়াঃ

“জার্মান মনোবিদ হারমান এবিনঘসের মতে,,

যে কোনো কিছু পড়ার এক ঘণ্টা পর সেটির সুধু মাত্র ৪৪ শতাংশই আমাদের মনে থাকে। বাকি ৫৬ শতাংশ আমরা ভুলে যাই।

তাই আমাদের উচিত তাৎক্ষণিক রিভিশন না দিয়ে একটু বিরতি দিয়ে একই বিষয় বার বার করে পড়া। তাতে পড়া মনে থাকার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। বিরতি দিয়ে বার বার পড়লে যে কোনো পড়াই অনেক দিন ধরে মনে থাকবে। আমরা পাড়াগুলিকে বার বার রিভিশন করবো এতে পড়া মনে থাকবে। পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার ইসলামিক উপায় গুলি কাজে লাগানো।

২- মার্ক করে পড়া

বিভিন্ন কালার পেন দিয়ে মার্ক করে বই পড়তে পারেন। এতে আপনার পড়ার প্রতি আগ্রহ বাড়বে।

৩- দেয়ালে টানিয়ে রাখা

পড়ার টেবিলের সামনের দেয়ালে গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো লিখে টানিয়ে রাখবেন। এতে সেই পড়া বাড়বাড় আপনার চোখে পড়বে। আর মনে থাকবে অনেকদিন।

৪- বেশি বেশি লেখা

বেশি বেশি লেখার অভ্যাস করতে হবে। কারন বই মুখে পড়ার থেকে যদি খাতায় লিখেন তাতে সেই পড়া আপনার মাথায় ঢুকে যায়। ভলে সহজে ভুলে যাবেন না।

৫- পড়তে বসার আগে হাটাহাটি

পড়তে বসার আগে একটু হাটাহাটি করবেন। তাতে আপনার শরিরের রক্ত চলাচল বাড়বে। ফলে পড়া মনে থাকবে।

পরিশেষে কিছু কথা

পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার ইসলামিক উপায় – পরিক্ষায় ভালো করতে হলে অবশ্যই আপনাকে ভালোভাবে পড়াশোনা করতে হবে। পাশাপাশি দোয়া পাঠ করবেন দেখবেন আল্লাহ রহমত করেছেন। কিন্তু পড়াশোনা বাদ দিয়ে যতই দোয়া দরুদ পরেন না কেনো কোনো কাজ হবে না। আপনাকে পড়তে হবেই।

About admin

Check Also

জুমার নামাজের নিয়ত

জুমার নামাজের নিয়ত, নিয়ম ও ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত

আপনি যদি জুমার নামাজের নিয়ত না জানেন তাহলে আজকের পোস্টটি আপনার জন্য। জুমার নামাজ প্রতি …