রমজান মাসের আমল – রমজানে যে ২৭ টি আমল সকলের করা উচিত

রমজান মাসের  আমলমাহে রমজান কাছাকাছি আসলেই মুসলিম ভাই ও বোনেরা বেশি বেশি আমল করতে লেগে পরেন।যাতে তারা মহান আল্লাহ কে খুশি করতে পারেন। এই পবিত্র মাসে আপনাদের আমল গুলোকে আরও সুন্দর করতে আমরা রমজান মাসের ২৭ টি স্পেশাল আমল নিয়ে আজকে আলোচনা করবো।

চলুন এবার জেনে নেই কি সেই  রমজান মাসের আমল গুলো-

Table of Contents

রমজান মাসের আমল

রমজান মাস আমাদের সমগ্র মুসলিম উম্মাহ এর জন্য ইবাদাত এর একটি মাস। অন্যান্য মাসের তুলনায় এই মাস সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। চলুন দেখে নেই যে ২৭ টি ইবাদাত রমজানে করতে পারেন-

১- চাঁদ দেখা

যেই বিশেষ ২৭ টি আমলের কথা আমরা আলোচনা করবো তার মধ্যে সর্বপ্রথম টি হলো চাঁদ দেখা। সাবান মাসের শেষ দিনে পশ্চিম আকাশে রমাদানের চাঁদ দেখা যায়। আমাদের নবী করিম (সা:) আমাদের  চাঁদ দেখে রোজা রাখতে এবং চাঁদ দেখে ঈদ উদযাপন করতে বলেছেন। অতএব একজন মুসলমান হিসেবে আমাদের উচিত রমজান মাসের চাঁদ দেখে আমাদের রোজা পালন শুরু করা। এবং চাঁদ দেখেই  ঈদ উদযাপন করা। কারন,এই চাঁদ দেখা নবী করিম (সা:) একটি সুন্নাহ।

 রমজান এবং ঈদের চাঁদ দেখে রমজান ও ঈদ উদযাপন করা অনেক সওয়াবের কাজ। কোনো কারন বশত যদি চাঁদ দেখতে গিয়ে আপনি চাঁদ দেখতে না পান। সেই দেখার জন্য যে চেষ্টা করেছেন সেই চেষ্টার কারনেও আপনি সাওয়াব পাবেন ইন শা আল্লাহ।

 চাঁদ দেখার পরে  একটি বিশেষ দোয়া নবী করিম  (সা:) আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন।

দোয়াটি  হলো-اللهم اهلله علينا باليمن و الايمان و السلامة و الاسلام ربي و ربك الله

বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল-য়ুমনি ওয়াল ঈমান, ওয়াসসালামাতি ওয়াল ইসলাম,  রাব্বি ওয়া রাব্বুকাল্লাহ।

বাংলা অর্থ : হে আল্লাহ! এই নতুন চাঁদ এবং নতুন মাসটিকে আপনি আমাদের জন্য বরকতময় করে দিন। ঈমানময় করে দিন। ঈমানের সাথে যেনো এই মাসে আমরা  সময় কাটাতে পারি। নিরাপত্তা, শান্তি এবং ইসলামের সাথে যেনো আমরা থাকে পারি। (হে চাঁদ) তোমার এবং আমার পালনকর্তা এক আল্লাহ। দোয়াটি চাঁদ দেখার পরে পড়া সুন্নত। 

অতএব রমাদান কে কেন্দ্র করে প্রথম আমাদের যে আমলটি হবে সেটি হলো, শাবানের শেষ দিবসে পশ্চিম আকাশে চাঁস তালাশ করা।এবং চাঁদ দেখার পরে দোয়া পাঠ করা।

একটি এলাকাতে কেউ যদি চাঁদ না দেখে তাহলে সবাই গুনাহগার হবে।কিছু না কিছু মানুষকে অবশ্যই চাঁদ দেখতে হবে। না হলে ওই এলাকার সবাইকে গুনাহগার হতে হবে। 

২- সিয়াম পালন করা

 রমাদানের ২য় আমল হলো সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ আমল।সেটা হলো সিয়াম পালন বা রোজা রাখা। প্রত্যেক মুসলমান, প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন নারী এবং পুরুষের জন্য মহান আল্লাহ সিয়াম পালন কে ফরজ করেছেন। আল্লাহ বলেছেন “তোমাদের ওপর রোজা রাখাকে ফরজ করা হয়েছে” 

অতএব রমজানে রোজা রাখা হলো রমজান মাসের সবথেকে বড় আমল

৩- তারাবির নামাজ আদায়

নবী করিম (সা:) বলেছেন

“যে ব্যক্তি রমজান মাসে  ঈমান ও এখলাসের সাথে,আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি ও সাওয়াবের আসায় দাঁড়িয়ে তারাবির নামাজ আদায় করবে তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দাওয়া হবে” ইন শা আল্লাহ! 

অতএব রমজান মাসের আমল করার জন্য আমাদের উচিত রমাজান মাসে উত্তম রূপে ইখলাসের সাথে তারাবির নামাজ আদায় করা। মা-বোনেরা বাড়িতে বসে এবং পুরুষরা মসজিদে জামাতের সাথে তারাবির নামাজ আদায় করারা চেষ্টা করবেন। এই তারাবির নামাজ আদায় হলো রমজানের ৩য় আমল

৪- সাহরি করা

আমরা অনেকে ইচ্ছাকৃত ভাবে সাহরি করি না। হয়তো খাওয়ার রুচি থাকেনা বা ভালো লাগে না। সাহরি খাওয়া ছাড়াও যদি কেউ রোজা রাখে রোজা হয়ে যাবে কিন্তু সাহরি খাওয়ার মধ্য দিয়ে যে সাওয়াব পাওয়া যায় তা থেকে আপনি বঞ্চিত হবে।

আমরা প্রতিদিনই বেঁচে থাকতে পেট ভরার জন্য খাবার খাই। কিন্তু এই খাবার খাওয়ার কারনে আমাদের কোনে সাওয়াব হয় না। 

কিন্তু, ভোর রাতে রোজা রাখার নিয়াতে খাবার খাওয়া যেটাকে সাহরি বলে। এই সাহরি খাওয়াতে একদিকে যেমন আমাদের পেট ভরবে অন্যদিকে একটি সুন্নত পালন করার জন্য আমাদের আমলনামায় সাওয়াব লেখা হবে। সুবহান আল্লাহ! নবী করিম (সা:) বলেছেন

“তোমরা সাহরি খাও। কারন,সাহরির খাবারের মধ্যে বরকত রয়েছে”

পেট ভরে খাওয়া জরুরি নয়। সাহরির নিয়তে কিছু একটু খান।তাতেই আপনার সাহরি খাওয়ার সাওয়াব লাভ হবে।

৫- রাতের শেষ প্রহরে সাহরি খাওয়া

সাহরি খাওয়ার সবথেকে উত্তম সময় হলো রাতের শেষ প্রহরআমাদের নবী করিম (সা:) রাতের শেষ প্রহরে সাহরি করতেন।তিনি এমন ভাবে সাহরি খেতেন যে তাঁর সাহরি খাওয়া শেষ হলে সেই সময় থেকে ফজরের আজান ও ফজরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার আগে মাঝখানে ৫০ টি আয়াত তিলাওয়াত করার সমপরিমান সময়ের গ্যাপ তিনি রাখতেন।

আমাদের দেশে অনেকেই মধ্য রাতে সাহরি করে ফেলেন। অনেকে আবার সন্ধ্যা রাতেই সাহরির খানা একবারে খেয়ে ফেলেন।কিন্তু এটা ঠিক নয়।

নবী করিম (সা:) বলেছেন “

এই উম্মত মুসলমান জাতি ততদিন পর্যন্ত কল্যানের মধ্যে থাকবে, যতদিন তারা সাহরি বিলম্ব করে খাবে”

৬- ইফতার করা

ইফতার করা রমজান মাসের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নাহ। সারাদিনের রোজার পরে নিজের সাধ্য অনুযায়ী ইফতার করা সওয়াবের কাজ। ৭- ইফতারিতে বিলম্ব না করা

আমরা অনেকে ইফতারি করতে দেরি করে ফেলি। এটা ঠিক নয়। নবী করিম (সা:) বলেছেন যতদিন পর্যন্ত এই উম্মত মুসলমান জাতি ইফতার দ্রুততার সাথে করবে ততদিন পর্যন্ত তারা কল্যাণের মধ্যে থাকবে। ইফতার তাড়াতাড়ি করা সুন্নাহ।

৮- ইফতারের দোয়া পড়া

আমরা অনেকে ইফতারের দোয়া সম্পর্কে জানিনা। আবার অনেকে ইফতারি করার আগে দোয়া পড়ি।

কিন্তু সঠিক নিয়ম হলো,  ইফতারের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলে শুরু করা। এবং ইফতারের শেষে দোয়া পড়া।

ইফতারের দোয়াটি হলো-

বাংলা উচ্চারণ : জাহাবাজ জামাউ; ওয়াব তালাতিল উ’রুকু; ওয়া ছাবাতাল আঝরু ইনশাআল্লাহ।’

অর্থ: (ইফতারের মাধ্যমে) পিপাসা দূর হলো,শিরা-উপসিরা সিক্ত হলো এবং যদি আল্লাহ চান সাওয়াবও স্থির হলো।

             (আবু দাউদ,মিশকাত)।

৯- সাহরি ও ইফতারে খেজুর খাওয়া

ইফতার ও সাহরি তে খেজুর খাওয়া সুন্নাহ। আমাদের নবী (সা:) ইফতার ও সাহরিতে খেজুর খেতেন। তিনি আধা পাকা খেজুর খেতে পছন্দ করতেন।

নবী করিম (সা:) বলেছেন,

” ইমানদারের সবচেয়ে উত্তম সাহরি হলো খেজুর”। 

সাহরিতে ভাত-তরকারি যাই খাই না কেনো পাশাপাশি খেজুর খাওয়া সুন্নত।তাছাড়া খেজুর অনেক উপকারি একটা খাবার।খেজুরের মধ্যে খাদ্যশক্তি রয়েছে। যেটা আমাদের শরিরে প্রচুর শক্তির যোগান দেয়। 

১০- বেশি বেশি দোয়া করা

রমজানে রোজা রাখার পাশাপাশি আমাদের উচিত বেশি বেশি দোয়া করা। আমাদের দুনিয়া,আমাদের আখিরাতের জন্য চাওয়া।কেননা,রোযাদার ব্যাক্তির দোয়া আল্লাহ তায়ালা ফিরিয়ে দেন না। 

নবী করিম (সা:) বলেছেন-

” কয়েক ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দাওয়া হয় না। এর মধ্যে একজন হলেন রোযাদার ব্যক্তি”

রোযাদার ব্যক্তি ইফতার করার আগ পর্যন্ত তার দোয়া কবুল হতে থাকে।

১১- সকল প্রকার পাপাচার বর্জন করা

রমজানের রোযার মূল উদ্দেশ্য শুধু মাত্র খাবার থেকে নয়,সকল প্রকার পাপাচার থেকে বিরত থাকাই হলো সাওম বা রোজা।

সাওম বা সিয়াম অর্থ বিরত থাকাআর এই বিরত থাকার মানে হলো আমার সামনে খাবার আছে, আমার পেটে ক্ষুদা থাকা সত্ত্বেও আমরা আল্লাহর ভয়ে খাইনা। এখান থেকে শিক্ষা গ্রহন করে  আমাদের জীবনের সকল হারাম,সকল নিষিদ্ধ কাজ থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে। এই শিক্ষাই আমরা সিয়াম বা রোজা থেকে পাই।

১২- মিথ্যা বলা/প্রতারনা করা থেকে বিরত থাকা

রোজা রেখেও যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও প্রতারনা করা থেকে বিরত থাকতে পারে না তার রোজা শুধুমাত্র উপশ করা হিসেবেই গন্য হবে। তাই আমাদের উচিত রমজান মাসে মিথ্যা বলা থেকে বিরত থাকা।পাশাপাশি অন্য সব মাসে ও মিথ্যা কম বলার প্রাকটিস এই মাসেই করা।

১৩- ঝগড়া/ কলহ থেকে বিরত থাকা

রমজানের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ আমলের মধ্যে একটি হলো ঝগড়া/ফেসাদ /মারামারি/কলহ থেকে বিরত থাকা। 

নবী করিম (সা:) বলেছেন,,

“কোনো রোজাদার ব্যক্তির সাথে যদি কেউ তর্ক বা ঝগড়া করতে আসে,তাহলে রোজাদার ব্যক্তি যেনো বলে সে যে রোজাদার অবস্থায় ঝগড়া/ফেসাদ /মারামারি/ করতে পারবে না”

অতএব আমরা রমজান মাসে বিশেষভাবে এসব থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করবো। ইন শা আল্লাহ। 

১৪- বেশি বেশি ভালো কাজ করা

রমজান মাসে বেশি বেশি ভালো কাজ করার চেষ্টা আমাদের করতে হবে। রমজান মাস অনেক পবিত্র মহিমান্বিত একটি মাস। অন্য মাসের তুলনায় এই মাসে আপনার করা প্রতিটি ভালো কাজের জন্য আপনি কয়েক গুন বেশি সাওয়াব লাভ করতে পারবেন। তাই এই মাসে আমাদের উচিত বেশি বেশি আমল করা।বেশি বেশি ভালো কাজ করার সুযোগ অন্য আর কোনো মাসে এতো বেশি পাওয়া যায় না।

১৫- গুরুত্বের সাথে ইস্তেগফার পড়া

রমজান মাস গুনাহ থেকে পানাহ লাভের মাস। রমজান মাসে আল্লাহ তায়ালা তাঁর অনেক বান্দা কে ক্ষমা ঘোষনা করেন। অনেক জাহান্নামি বান্দা কে মাফ করে দেন।যা অন্য কোনো মাসে এতো বেশি করেন না। এই মাসে আমাদের বেশি বেশি ইস্তেগফার পড়ে আমাদের জীবনের সকল গুনাহ, ভুল ত্রুটি থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাইতে হবে। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে হবে।

১৬- রোজাদারদের ইফতার করানো

নবী করিম (সা:) বলেছেন,

“কোনো  ব্যক্তি যদি কোনো রোজাদারকে ইফতার করান তাহলে, আল্লাহ তায়ালা ওই রোজাদার ব্যক্তির রোজা রাখার সমোপরিমান সওয়াব তাকে দান করবেন”

আমরা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী আমাদের আশেপাশের দরিদ্র ব্যক্তিদের ইফতার করাবো। বেশি না পারি।আমাদের যতোটুকু আছে সেটা দিয়েই আমরা আল্লাহকে খুশি করারা চেষ্টা করবো।

১৭- বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা

রমজান মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমল গুলোর মধ্যে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা। কারন,এই রমজান মাসেই আমাদের পবিত্র কুরআন নাজিল হয়েছিল। এই কুরআন দিয়েই আল্লাহ তায়ালা রমজানের পরিচয় দিয়েছেন। রমজান মাসের মর্যাদা হয়েছে এই কুরআন এর কারনে। এ জন্যই রমজান মাসে কুরআনুল কারিমের সাথে আমাদের বেশি সময় কাটাতে হবে। বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করতে হবে। 

১৮- একে অপরকে কুরআন তিলাওয়াত করে শোনানো

রমজান মাসে আমার নবী করিম (সা:) কুরআন তিলাওয়াত শুনাশুনি করতেন। জিব্রাইল (আ:) এর সাথে কুরআন তিলাওয়াত করতেন । তিনি জিব্রাইলে কে তিলাওয়াত করে শোনতেন জিব্রাইল তাঁকে তিলাওয়াত করে শোনাতেন। রমজান মাসে আপনি নিজে কুরআন তিলাওয়াত করুন। পাশাপাশি আপনার পরিবারের লোকজনদের তিলাওয়াত করে শোনান। তাদের তিলাওয়াত নিজে শোনেন। এতে অনেক বরকত আসবে। 

তাছাড়া কুরআন বুঝে পড়া, অর্থসহ ব্যখ্যা করা, কুরআনে আল্লাহ কি বলেছেন সেই এলেম অর্জন করার এক সুবর্ন সুযোগ এই রমজান মাস।

১৯- সাধ্য অনুযায়ী সাদকাহ দেওয়া

রমজান মাসের প্রতিটি আমল অন্য মাসের তুলনায় শ্রেষ্ঠ আমলে পরিনত হয়।অন্য মাসের তুলনায় এই মাসে করা প্রতিটি ভালো কাজের মান কয়েকগুন বৃদ্ধি পায়। তেমনই আপনার সাদাকাহ দাওয়ার জন্য অন্য মাসের তুলনায় অনেক গুন বেশি সাওয়াব আপনি লাভ করতে পারবেন। তাই বেশি না হোক নিজের সাধ্যের মধ্যে থেকে যতটা পারেন সাদাকাহ দিন রমজান মাসে।

২০-তাহাজ্জুদ আদায় করা

তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব অনেক। এর বরকত ও রয়েছে। রমজানে এর বরকত আরও বহুগুন বেড়ে যায়। সচারাচর তাহাজ্জুদ আমাদের পড়া হয় না। কিন্তু রমজানে আমাদের অনেক বড় সুযোগ থাকে তাহাজ্জুদ আদায় করার। সাহরি খাওয়ার কিছুক্ষণ আগে উঠে ২/৪ রাকাত যে যতো পারেন তাহাজ্জুদ আদায় করতে পারেন। সওয়াব লাভের এতো বড় সুযোগ যারা ছেড়ে দিবে তারা হতভাগা ছাড়া আর কিছুই নয়।

২১- সামর্থ্য থাকলে ওমরাহ করা

নবী করিম (সা:) বলেছেন, 

“রমজানের একটি ওমরাহ একটি হজ্জের সমতুল্য।

তাই যাতের তাওফিক আছে তাদের উচিত রমজানে ওমরাহ করা।

২২- রোজা রেখে মেসওয়াক করা

আমরা অনেকে মনে করি রোজা রেখে মেসওয়াক করলে হয়তো রোজা দূর্বল হয়ে যায়। কিন্তু এটা ভুল ধারনা। আম্মাজান আয়েশা (রা:) বলেছেন,

” আমি নবী করিম (সা:) কে রমজান মাসে রোজা রেখে এতো বেশি পরিমানে মেসওয়াক করতে দেখেছি যা বলে শেষ করা যাবে না”।

 তাই রমজান মাসে রোজা রেখে মেসওয়াক করা উচিত।

২৩-  ইত্তেকাফে বসা

যাদের সুযোগ আছে তাদের উচিত রমজানের শেষ ১০ দিন ইত্তেকাফে বসে যাওয়া। তৃতীয় হিজরিতে রোজা ফরজ হয়ে যাওয়ার পরে নবী করিম (সা:) জীবনে কখনও রমজানের শেষের ১০ দিন মসজিদের ইত্তেকাফে বসা ছাড়া সময় কাটান নি। আমাদের অনেকেই আছেন যাদের জীবনে একবারও ইত্তেকাফের বসার তাওফিক হয়নি। আমাদেরও উচিত এই ইবাদতের সুযোগটি হাত ছাড়া না করা।

২৪-  রমজানের শেষ দশকে বেশি বেশি ইবাদত করার চেষ্টা করা

বুখারি শরীফে আছে,,নবী করিম (সা:)-এর সম্পর্কে আম্মাজান আয়েশা (রা:) বলেছেন,, 

“রমজানের শেষ ১০ দিন যখন শুরু হতো তখন নবী (সা:) সারারাত আর ঘুমাতেন না। কোমড় বেঁধে নিতেন এবং তাঁর পরিবারকে তিনি জাগিয়ে দিতেন”

আরেক হাদিছে আছে, নবী করিম (সা:) বলেছেন,,

“নবীজির জীবনে কখনও ইবাদতের জন্য এতো চেষ্টা করতেন না যতটা না রমজানের শেষ দশকে চেষ্টা করতেন।

আমাদের সবার উচিত রমজানের শেষ দশকে গুরুত্বের সাথে বেশি বেশি ইবাদত করার চেষ্টা করা। আল্লাহ আমাদের সকলকে সেই তাওফিক দান করুক, আমীন।

২৫- লাইলাতুল কদর তালাশ করা

নবী করিম (সা:) আমাদেরকে রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাত গুলোতে লাইলাতুল কদর তালাশ কর‍তে বলেছেন। লাইলাতুল কদর এমন একটি রাত যেই রাতে কুরআন নাযিল হয়েছিল। বছরের শ্রেষ্ঠ রাত এই কদরের রাত। হাজার রাতের চেয়েও শ্রেষ্ঠ রাত এই কদরের রাত।এই রাতের গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক বেশি। 

রমজানের শেষ দশকের প্রতিটি বিজোড় রাত গুলোতে আমাদের লাইলাতুল কদর তালাশ করতে হবে এবং বেশি বেশি ইবাদত করতে হবে লাইলাতুল কদরের রাত পাওয়ার আশায়।

২৬-  লাইলাতুল কদরে দোয়া পড়া

লাইলাতুল কদরের দোয়া রমজানের আরেকটি বিশেষ আমল। 

আল্লাহুম্মা ইন্নাকা ‘আফুউন,তুহিব্বুন ‘আফওয়া,ফাফু’আন্নী

অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল। আপনি ক্ষমা করতে পছন্দ করেন।আপনি আমাকে ক্ষিমা করে দিন।

২৭- রমজানের শেষে বা ঈদের আগে ফিতরা আদায় করা

নবী করিম (সা:) বলেছেন,,

” ফিতরা দুইটা উদ্দেশ্যে, প্রথমত রমজানে রোজা রেখে আমাদের করা ছোটখাট ভুল ত্রুটি হয়ে যায় এগুলো থেকে রোজাকে পরিচ্ছন্ন করা। দ্বিতীয়ত, 

ঈদেরন্দিন গরিব মানুষের খাবারের নিশ্চিয়তা এনে দেয়। এজন্য রমাজানের শেষ আমল হলো ফিতরা আদায় করা। এটা দিয়ে আমরা রমজানকে বিদায় জানাবো। পরিবারের সবার তরফ থেকে আমরা ফিতরা আদায় করবো। 

আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুক। 

পরিশেষে কিছু কথা

রমজান মাসের আমল – মাহে রমজান আমাদের জন্য অনেক মহিমান্বিত মাস। এর গুরুত্ব ও ফজিলত বলে শেষ করা যাবে না। আমাদের সবার উচিত এই মাসে যতো বেশি পারি ইবাদত বন্দেগীতে মশগুল থাকা। আপনাদের সুবিধার্থে আমরা বিশেষ কিছু আমলের কথা বলেছি যা সম্মানিত শায়েখ দের দ্বারা আলোচিত। আপনারা এই আমল অনুযায়ী চলতে পারলে আশা করি এই মহিমান্বিত মাস টি খুব সুন্দরভাবে বরকত ময় করে কাটাতে পারবেন।ইন শা আল্লাহ 

আল্লাহ আমাদের সবাইকে রমজানে বেশি বেশি আমল করার ও জীবনের সকল গুনাহ থেকে মহান আল্লাহর কাছে পানাহ লাভ করার তাওফিক দান করুক। আমীন। জাজাকাল্লাহু খইর।

About admin

Check Also

জুমার নামাজের নিয়ত

জুমার নামাজের নিয়ত, নিয়ম ও ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত

আপনি যদি জুমার নামাজের নিয়ত না জানেন তাহলে আজকের পোস্টটি আপনার জন্য। জুমার নামাজ প্রতি …