রোযা ভঙ্গের কারণ সমুহ – রমজান বা রোযা প্রতিটি মুসলিমের জন্য ফরজ ইবাদত। বছরের অন্যান্য মাসের তুলনায় সিয়াম সাধণার মাস কে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে অবিহিত করা হয়। প্রতিটি মুসলমান ব্যাক্তির জন্য রমজানের ৩০ টি রোযা ফরজ করে দেয়া হয়েছে।
রোযার মাসে আমরা অনেকে সময়ে বিভিন্ন ধরণের কাজ জেনে অথবা না জেনে করে ফেলি। যার ফলে আমরা বুঝতে পারি না আমার রোযা টি হবে কি না। রোযার মাসে রোযা রেখে কিছু কাজ আপনাকে পরিত্যগ করতে হবে। অন্যথ্যায় আপনার রোযা হবে না। রোযা ভঙ্গের কারণ সমুহ জানা প্রতিটি মুসলিমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
রোযা ভঙ্গের কারণ সমুহ
মুসলমান ভাই ও বোনেরা, সারাটি বছর অপেক্ষার পর আমরা আমাদের সবচেয়ে সুন্দর মাস সিয়ামের মাস টি পেয়ে যাই। রোযার মাসে আমরা ফরজ ইবাদত এর পাশাপাশি নফল ইবাদত করি। রোযা রেখে কোন কোন কাজ গুলো পরিত্যাগ করতে হবে এটা জেনে নিন আজকের রোযা ভঙ্গের কারণ সমুহ আর্টিকেলে।
অনেক কারণেই রোযা ভেংগে যায় নিচে রোযা ভঙ্গের কারণ সমুহ দেয়া হলো-
- মুখ ভরে ভমি করলে।
- কান বা নাকের মাধ্যমে কোনো মেডিসিন বা কোনো কিছু শরিরে প্রবেশ করালে।
- পানি দিয়ে কুলি করার সময় অনিচ্ছাকৃত ভাবে গলা ও পেটে পানি প্রবেশ করলে।
- প্রসাব পায়াখানার রাস্তা দিয়ে কোনো কিছু শরিরে প্রবেশ করালে।
- যিনি রোযা রেখেছেন তাকে জোর করে কিছু পান করালে।
- ইফতারের সময় হয়েছে ভেবে। ইফতারের সময়ের পূর্বেই কিছু পান করলে।
- স্বামি- স্ত্রী জোর পূর্বক সহবাস বা অনিচ্ছাকৃত ভাবে সহবাসে লিপ্ত হলে।
- ভুলবসত কিছু খেলে রোযা ভেংগে গেছে ভেবে আরো কিছু খেলে।
- জিহবা এর মাধ্যমে দাত এর ফাক থেকে কোনো খাবারের অংশ এনে খেলে।
- স্বল্প পরিমান ভমি আসলে ইচ্ছকৃত ভাবে খেয়ে ফেললে।
- সেহরির সময় শেষ হয়নি ভেবে সুবহে সাদেকের পরেও কিছু খেলে বা পান করলে।
- স্বেচ্ছায় বীর্যপাত করালে।
- শিংগা লাগালে।
- হায়েজ নিফাস এর রক্ত বের হওয়া।
উক্ত বিষয় গুলো রোযা রেখে করলে রোযা ভঙ্গের কারণ সমুহ এর মধ্যে পরলে রোযা কাজা করে নিতে হবে। অনিচ্ছাকৃত ভাবে কোনো ভুল করে ফেললে পরবর্তীতে কোনো কিছু না খেয়ে ইফতার পর্যন্ত থাকতে হবে এমন মতামত অনেকেই দিয়েছেন।
রোযা মাকরুহ হওয়ার কারণ সমূহ
বিভিন্ন ধরণের কার্যক্রম এর জন্য অনেক ভাবেই রোযার ওজন কমে যায় অর্থাৎ মাকরুহ হয়ে যায়। যে সব কারন গুলোতে রোযা মাকরুহ হয় তা নিচে দেয়া হলো-
- রোযা রেখে কোনো কিছু মুখে নিয়ে চিবানো।
- বার বার পানি দিয়ে কুলি করা।
- পানিতে অতিরিক্ত সময় ধরে বসে থাকা বা গোসল করা।
- টুথ পাউডার, পেস্ট, কয়লা ইত্যাদি দিয়ে দাত মাজলে।
- কোনো কারণ ছাড়াই জিহবা দিয়ে কোনো কিছুর স্বাদ পরখ করা।
- রোযা থাকা অবস্থায় কারো নামে গীবত বা কুতসা রটানো।
- মিথ্যা কথা বলা।
- অশ্লিল কোনো কিছু দেখা।
- অশ্লিল বাক্য বা শব্দ উচ্চারণ করা।
- ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত হওয়া।
যেসব কারনে রোযা ভাংঙ্গা যাবে
বিশেষ কিছু ওজরে রোযা ভাংঙ্গা যায়। রোযা অবস্থায় থাকা অবস্থায় সেগুলো হলো-
- পেটে পিড়া হওয়া যা মেডিসিন ছাড়া কমানোর সম্ভব নয়।
- শারিরিক অসুস্থতা থাকলে যদি রোজা রেখে বেশি তৃস্নার্ত হয় ও মৃত্যুর ভয় থাকে।
- বিসাক্ত সাপ বা কোনো কিছু কামড়ালে চিকিৎসার জন্য মেডিসিন নিতে হলে।
- গর্ভধারণ অবস্থায় সন্তান নষ্ট হওয়ার আশংকা থাকলে।
- শিশুর মা সন্তানের দুধ ঘাটতি হওয়ার আশংকা থাকলে
- রোযা রেখে অতিরিক্ত কষ্ট হলে যদি মৃত্যুর আশংকা থাকে।
- বয়সের কারণে অক্ষম হলে।
- মুসাফির অবস্থায় কষ্ট হলে।
- স্ত্রি লোকের হায়েজ বা পিরিয়ড
- নেফাস বা বাচ্চা প্রসবের সময় শুরু হলে।
রোযার কাফফারা
স্বেচ্ছায় কোনো খাবার খেলে, স্ত্রী সহবাস করলে, হস্তমৈথুন করলে ইত্যাদি ক্ষেত্রে কাযা ও কাফফারা আদায় করতে হবে। ইচ্ছাকৃত ভাবে রোযা ভাংগলে অবশ্যই কাফফারা করতে হবে। কাফফারা এর জন্য বিরতিহীন ভাবে একাধারে ৬০ টি রোযা রাখতে হবে। যদি কোনো কারণে একটি রোযা ভেংগে যায় তবে আমার পূনরায় ৬০ টি রোযা সম্পন্ন করতে হবে। স্ত্রী লোকের ক্ষেত্রে যদি হায়েজ নেফাস এর কারণে রোযা রাখতে অপারগ হয়ে তবে পূনরায় রাখতে হবে না।
যদি ৬০ টি রোযা রাখতে অক্ষম হয় তবে তাহলে ৬০ জন মিসকিন কে দু- বেলা অথবা ১ জন মিসকিন কে ২ বেলা করে ৬০ দিন তৃপ্তি সহকারে খাওয়াতে হবে। অথবা ৬০ জন মিসকিন কে প্রত্ক্যে সদকায় ফিতরের মূল্য পরিশোধ করতে হবে।
আমাদের শেষ কথা
রোযা ভঙ্গের কারণ সমুহ আর্টিকেলে আমরা চেষ্টা করছি কারন গুলো একত্রিক করে সাজানোর। কোনো প্রকার ভুল ত্রুটি থাকলে আমাদের জানাবেন মন্তব্য করে। জগতে সবার জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা আছে আমিও তার ব্যাতিক্রম নই। ধন্যবাদ সবাইকে।
আরো পড়ুন-